চলে গেলেন কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবিবার (১৫ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে না ফেরার পথে পাড়ি জমান গুণী এই শিল্পী। তার মৃত্যুর খবরে শোক নেমে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি অঙ্গনে।
গত মাস থেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ভর্তি ছিলেন কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে। গত তিনদিন ধরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।
জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হলেও মস্তিষ্কে স্নায়ুর সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। শরীরে প্রবলভাবে বাড়ে অক্সিজেনের চাহিদা। কিদনির অবস্থারও ঘটে মারাত্মক অবনতি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায়। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন তার বাবা। তার দাদার ছিল নাটকের দল। বাড়িতেই নাট্য চর্চার পরিবেশ থাকায় ছোট থেকেই নাটকে কাজ করা শুরু হয় তার।
কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়েন সৌমিত্র। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে করেন স্নাতোকত্তর। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনেই নাটকের প্রতি সত্যিকার ভালোবাসা জন্মায়। পুরোপুরি মনোযোগ দেন সেখানে।
বড় পর্দায় প্রথম কাজ করেন সত্যজিত রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করে। ছবিটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। এর আগে রেডিওতে ঘোষক ও মঞ্চে অভিনয় করে বেড়াতেন সৌমিত্র।
সত্যজিত রায়ের ১৪ টি সিনেমায় দাপটের সঙ্গেই অভিনয় করেছেন শক্তিমান এই অভিনেতা। সিনেমা ছাড়াও কবিতা লেখা ও আবৃত্তিতেও চির ভাস্মর হয়ে থাকবেন তিনি। নাটক পরিচালনা করেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
তার উল্লেখযোগ্য অসংখ্য সিনেমার মধ্যে কয়েকটি হলো- অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, দেবী, স্বরলিপি, তিনকন্যা, পুনশ্চ, অতল জলের আহ্বান, অভিযান, বর্ণালী, প্রতিনিধি, চারুলতা, আকাশকুসুম, মনিহার, হঠাৎ দেখা, অজানা শপথ, অরণ্যের দিনরাত্রি, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, দত্তা, জয় বাবা ফেলুনাথ, দেবদাস, গণদেবতা ও হীরক রাজার দেশে।
ভারত সরকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অব অনার’ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই বছরে তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার প্রদান করে। তবে ২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
Leave a Reply